
বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা
কলকাতা (বাংলার জাগরণ ডেস্ক): কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) আজকের বিশ্বে প্রযুক্তি জগতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। ভারতবর্ষে AI নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। তরুণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ক্ষেত্রে ক্যারিয়ার গড়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়ছে, তবে অনেকেই জানেন না কীভাবে শুরু করবেন, কোন যোগ্যতা প্রয়োজন, এবং কোথায় পড়াশোনার সুযোগ রয়েছে।

এই প্রতিবেদনে আমরা ভারতের শিক্ষার্থীদের জন্য AI শিক্ষার পথচলা এবং সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরছি।
AI পড়াশোনার জন্য প্রাথমিক যোগ্যতা
AI নিয়ে পড়াশোনা শুরু করতে শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকভাবে বিজ্ঞান শাখায় উচ্চমাধ্যমিক (১২শ শ্রেণি) পাশ করতে হবে। এই ক্ষেত্রে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি এবং ম্যাথমেটিক্স (PCM) বিষয় থাকা আবশ্যক। গণিতের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয় কারণ AI-এর মূল ভিত্তি হল অ্যালগরিদম, স্ট্যাটিস্টিক্স এবং প্রোগ্রামিং। কম্পিউটার সায়েন্স থাকলে অতিরিক্ত সুবিধা হয়, তবে এটি বাধ্যতামূলক নয়।
১২শ শ্রেণি পাশের পর শিক্ষার্থীদের প্রবেশিকা পরীক্ষা যেমন JEE Main, JEE Advanced, BITSAT, বা রাজ্য স্তরের ইঞ্জিনিয়ারিং প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নিতে হবে। এই পরীক্ষাগুলোর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার সায়েন্স, AI, বা সম্পর্কিত বিষয়ে বিটেক বা বিএসসি কোর্সে ভর্তি হতে পারেন। যারা স্নাতকোত্তর স্তরে AI পড়তে চান, তাদের জন্য GATE পরীক্ষার মাধ্যমে এমটেক বা এমএস প্রোগ্রামে ভর্তি হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কীভাবে পড়াশোনা করবেন?
AI একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র, যার মধ্যে রয়েছে মেশিন লার্নিং, ডিপ লার্নিং, ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP), কম্পিউটার ভিশন, এবং রোবোটিক্স। শিক্ষার্থীদের প্রথমে কম্পিউটার সায়েন্স বা তথ্যপ্রযুক্তির মৌলিক বিষয়গুলো শিখতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:
প্রোগ্রামিং: পাইথন, জাভা, বা C++ এর মতো ভাষায় দক্ষতা অর্জন।
গণিত: লিনিয়ার অ্যালজেব্রা, প্রোবাবিলিটি, এবং স্ট্যাটিস্টিক্স।
ডেটা সায়েন্স: ডেটা অ্যানালিসিস এবং ভিজুয়ালাইজেশন।
মেশিন লার্নিং ফ্রেমওয়ার্ক: TensorFlow, PyTorch, এবং Scikit-learn এর মতো টুলস।
বিটেক বা বিএসসি স্তরে এই বিষয়গুলোর ভিত্তি তৈরি হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা এমটেক, এমএস, বা পিএইচডি-র মাধ্যমে AI-এর নির্দিষ্ট শাখায় বিশেষজ্ঞ হতে পারেন। এছাড়াও, Coursera, edX, বা Udemy-এর মতো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে AI-এর স্বল্পমেয়াদি কোর্স করে দক্ষতা বাড়ানো যায়।
ভারতে AI শিক্ষার জন্য শীর্ষ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়
ভারতের বিভিন্ন নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে AI এবং সম্পর্কিত কোর্স রয়েছে। নিচে কয়েকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের তালিকা দেওয়া হল:
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (IIT)
IIT বম্বে: কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বিটেক ও এমটেক কোর্সে AI এবং মেশিন লার্নিংয়ের বিশেষ পাঠ্যক্রম রয়েছে।
IIT দিল্লি: AI-এর উপর সেন্টার ফর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড ডেটা সায়েন্স রয়েছে।
IIT মাদ্রাস: মেশিন লার্নিং এবং ডেটা সায়েন্সে বিশেষ কোর্স এবং গবেষণার সুযোগ।
IIT খড়গপুর: AI-এর উপর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম এবং গবেষণা কেন্দ্র।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (IISc), বেঙ্গালুরু
IISc-তে AI এবং মেশিন লার্নিংয়ের উপর উচ্চমানের গবেষণা এবং এমটেক প্রোগ্রাম রয়েছে। এখানে ডেটা সায়েন্স এবং রোবোটিক্সেও বিশেষ কোর্স আছে।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (NIT)
NIT সুরাটকল: কম্পিউটার সায়েন্সে বিটেক এবং AI-এর উপর বিশেষ কোর্স।
NIT তিরুচিরাপল্লি: ডেটা সায়েন্স এবং মেশিন লার্নিংয়ে স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম।
বিটস পিলানি
কম্পিউটার সায়েন্সে বিটেক এবং AI-এর উপর বিশেষ ঐচ্ছিক বিষয়। এছাড়া গবেষণা সুযোগ রয়েছে।
জয়পুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (JNU), জয়পুর
AI এবং মেশিন লার্নিংয়ের উপর বিটেক এবং ডিপ্লোমা কোর্স রয়েছে। এটি তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী এবং নতুন প্রজন্মের জন্য উপযুক্ত।
ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (IIIT)
IIIT হায়দ্রাবাদ: AI এবং মেশিন লার্নিংয়ের উপর বিশ্বমানের গবেষণা এবং শিক্ষা।
IIIT বেঙ্গালুরু: ডেটা সায়েন্স এবং AI-এর উপর স্নাতকোত্তর কোর্স।
আমিটি ইউনিভার্সিটি, নয়ডা
AI এবং রোবোটিক্সে বিটেক এবং এমটেক প্রোগ্রাম। এটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জনপ্রিয়।
জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, কলকাতা
পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কম্পিউটার সায়েন্সে বিটেক এবং এমটেক প্রোগ্রাম অফার করে। এখানে AI গবেষণার সুযোগও রয়েছে।
শিক্ষার্থীদের জন্য সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ
ভারত সরকার AI গবেষণা ও শিক্ষার উপর জোর দিচ্ছে। National AI Strategy এবং AI for All উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য স্কলারশিপ, ইন্টার্নশিপ, এবং স্টার্টআপের সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তবে, উচ্চমানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য তীব্র প্রতিযোগিতা এবং সীমিত আসন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এছাড়া, গ্রামীণ এলাকার শিক্ষার্থীদের জন্য প্রযুক্তিগত সংস্থানের অভাবও বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
তবে, অনলাইন শিক্ষা এই সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারি প্ল্যাটফর্ম যেমন SWAYAM এবং NPTEL-এ বিনামূল্যে AI কোর্স রয়েছে। এছাড়া, Google, Microsoft, এবং Amazon-এর মতো কোম্পানি ভারতে AI স্কিলিং প্রোগ্রাম চালাচ্ছে।
উপসংহার
AI ভারতের তরুণদের জন্য একটি সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ার পথ। সঠিক শিক্ষা, দক্ষতা, এবং ক্রমাগত শেখার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই ক্ষেত্রে সাফল্য পেতে পারেন। IIT, NIT, এবং IIIT-এর মতো প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্ম শিক্ষার্থীদের জন্য দরজা খুলে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষার্থীদের জন্য জাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং IIT খড়গপুরের মতো প্রতিষ্ঠান সহজলভ্য বিকল্প।।
তথ্যসূত্র: শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ভারত সরকার; IIT ও NIT ওয়েবসাইট; X-এ প্রকাশিত তথ্য।