
আসানসোল, ১৫ এপ্রিল ২০২৫
আসানসোল শহরের ক্রমবর্ধমান যানজট ও শিল্পাঞ্চলের উন্নয়নের লক্ষ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবি জোরালো হয়ে উঠেছে। এই দাবিকে সামনে রেখে মঙ্গলবার আসানসোলের শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল রাজ্যের আইন ও শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এই বৈঠকে শহরের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন, যারা আসানসোলের যানজট নিরসন ও শিল্পাঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
বৈঠকে উপস্থিত ফসবেকির সভাপতি সচিন রায় জানান, আসানসোল শহর পশ্চিম বর্ধমান জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পকেন্দ্র। কয়লা ও ইস্পাত শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার যানবাহনের চলাচল হয়, যা শহরের প্রধান সড়কগুলিতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করে। বিশেষ করে জিটি রোড ও অন্যান্য ব্যস্ততম সড়কে দীর্ঘ সময় ধরে যানজটের কারণে ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ উভয়ই সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই সমস্যা সমাধানে ফ্লাইওভার নির্মাণই একমাত্র কার্যকর সমাধান বলে তারা মনে করেন।

আসানসোল রানিগঞ্জ এলাকার শিল্পপতি বয়োজ্যেষ্ঠ রমাপ্রসাদ খৈতান বলেন, “আসানসোল রানিগঞ্জ শহরের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য যানজট নিরসন অত্যন্ত জরুরি। ফ্লাইওভার নির্মাণ হলে শুধু যানজট কমবে না, ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনও সহজ ও দ্রুত হবে। এতে শিল্পাঞ্চলের প্রতিযোগিতামূলক ক্ষমতা বাড়বে।” তিনি আরও জানান, শহরের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট যেমন আসানসোল রেল স্টেশন এলাকা, ভগত সিং বা বার্ণপুর মোর, গোধূলি মোড়, হটন রোড সিটি বাস স্টান্ড এলাকা ও রাহালেন মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণের প্রস্তাব তারা মন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেছেন।
মন্ত্রী মলয় ঘটক বৈঠকে শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের প্রস্তাব মনোযোগ দিয়ে শোনেন এবং ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, “আসানসোল শহরের উন্নয়ন আমাদের কাছে অগ্রাধিকার। যানজট নিরসন ও শিল্পাঞ্চলের প্রসারের জন্য ফ্লাইওভারের প্রয়োজনীয়তা আমরা বুঝতে পারছি। এই বিষয়ে রাজ্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে আলোচনাও শুরু হয়েছে, দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” তিনি আরও জানান, প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য শীঘ্রই একটি কারিগরি দল পাঠানো হবে।
বৈঠকে উপস্থিত আরেক ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি পবন গুটগুটিয়া জানান, ফ্লাইওভার নির্মাণ শুধু যানজটের সমস্যাই সমাধান করবে না, বরং শহরের পর্যটন ও বিনিয়োগের সম্ভাবনাকেও বাড়িয়ে তুলবে। তিনি বলেন, “আসানসোলের কাছে মাইথন, কল্যাণেশ্বরী মন্দিরের মতো পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে। যানজট কমলে পর্যটকদের আগমন বাড়বে, যা স্থানীয় অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে।” বার্ণপুর কারখানায় নতুন করে ৩৬ হাজার কোট টাকা ইনভেস্ট হচ্ছে যা নতুন দিগন্ত এনে দেবে। তাই ফ্লাই ওভার প্রয়োজন।
এই বৈঠকের পর শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা মনে করছেন, মন্ত্রীর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার ফলে আসানসোল শহরে ফ্লাইওভার নির্মাণের দাবি বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাবে। তবে, স্থানীয় বাসিন্দারা চান এই প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়িত হোক, যাতে তারা যানজটের সমস্যা থেকে মুক্তি পান।।