
বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা
কলকাতা, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি, প্রাক্তন সাংসদ এবং প্রাক্তন বিধায়ক দিলীপ ঘোষ আর চিরকুমার নন! শুক্রবার নিউ টাউনের নিজের বাড়িতে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে। বিজেপির রাজনৈতিক মঞ্চে সবসময় আগ্রাসী ভূমিকায় দেখা গেলেও, এবার ব্যক্তিগত জীবনে এক নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত এই রাজনীতিক। দিলীপের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, গত লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর বিষণ্ণতার মধ্যে থাকা দিলীপকে জীবনের নতুন পথ দেখিয়েছেন রিঙ্কু।
দিলীপ এবং রিঙ্কুর পরিচয় বিজেপির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই। রিঙ্কু মজুমদার উত্তর কলকাতা শহরতলির বিজেপি মহিলা মোর্চার পর্যবেক্ষক এবং বিবাহবিচ্ছিন্না। তাঁর ২৫ বছর বয়সী এক পুত্র সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে কর্মরত। দিলীপের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, লোকসভা ভোটে পরাজয়ের পর রিঙ্কুই প্রথম সংসার বাঁধার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেছিলেন, “এখন তো তাঁর সঙ্গে কেউ নেই। আমি তোমার সঙ্গে থাকতে চাই।” প্রথমে রাজি না হলেও, মায়ের পীড়াপীড়ি এবং নিজের জীবনের একটি অপূর্ণ বৃত্ত পূরণের তাগিদে শেষ পর্যন্ত সম্মত হন দিলীপ।
জানা গেছে, এই বিবাহের ‘পাকা কথা’ হয় গত ৩ এপ্রিল কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে। কেকেআর এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদের মধ্যে আইপিএল ম্যাচ চলাকালীন ক্লাব হাউসের ১১ নম্বর বক্সে বসে খেলা দেখছিলেন দিলীপ, রিঙ্কু, রিঙ্কুর পুত্র এবং হবু শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা। সেখানেই চূড়ান্ত হয় তাঁদের বিবাহের সিদ্ধান্ত।

দিলীপ ঘোষ ও তার ভাবী স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদারের সংগৃহীত ছবি।
বৃহস্পতিবার দিলীপের আসন্ন বিবাহের খবর প্রকাশ্যে আসতেই রাজনৈতিক মহলে শুরু হয় তুমুল আলোচনা। একটি সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের জবাবে দিলীপ তাঁর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে বলেন, “কেন, আমি কি বিয়ে করতে পারি না? বিয়ে করা কি অপরাধ?” তিনি সরাসরি হ্যাঁ বা না কিছুই বলেননি, তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ মহল নিশ্চিত করেছে যে এটি একটি ‘সাহসী’ সিদ্ধান্ত।
বিজেপির একাংশ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে দিলীপের বাড়িতে আগমন শুভেচ্ছা জানাতে আসছেন দলের নেতা সুনীল বনসল এবং সতীশ ধন্দ বল। জানা গেছে। শুক্রবার নিউ টাউনের বাড়িতে একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানে দিলীপ ও রিঙ্কুর বিবাহ সম্পন্ন হবে! দিলীপ আড়ম্বরে বিশ্বাসী নন, তাই আমন্ত্রিতের সংখ্যা সীমিত, কেবল নিকটজনেরাই উপস্থিত থাকবেন।
দিলীপের মা পুস্পলতা ঘোষ এই বিবাহের পক্ষে ছিলেন। তিনি চাইতেন, পুত্র সংসারী হন যাতে তিনি পুত্রবধূর সঙ্গে সময় কাটাতে পারেন। এছাড়াও, তাঁর উদ্বেগ ছিল, তাঁর অবর্তমানে দিলীপের দেখাশোনা কে করবেন। ষাটোর্ধ্ব দিলীপের জীবন এখনও রাজনীতিময়। আগামী ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারে। বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করতে পারে বা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিতে পারে। এই ব্যস্ততার মধ্যে মায়ের দেখাশোনার জন্য একজন সঙ্গী থাকা জরুরি বলে মনে করেন তাঁর ঘনিষ্ঠরা।
দিলীপ প্রথমে রাজনৈতিক দায়িত্বের কথা ভেবে বিবাহে রাজি ছিলেন না। তিনি আশা করেছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁকে আবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি করা হতে পারে। কিন্তু তাঁর হিতৈষীরা বোঝান, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এমন কোনও সম্ভাবনা নেই। এরপরই তিনি বিবাহে সম্মত হন।
বিজেপির অন্দরে দিলীপের বিবাহ নিয়ে কানাঘুষো চললেও, তিনি নিজে বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। তবে শুক্রবারের পর ‘সংসারী’ দিলীপকে আর গোপন রাখা সম্ভব হবে না। এখন দেখার বিষয়, এই বিবাহের পর তিনি কোনও জমকালো সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন কি না। যদিও দিলীপের স্বভাব অনুযায়ী, তিনি সাদামাটা জীবনযাপনই পছন্দ করেন। এই বিষয়ে দিলিপ নিজে কি প্রতিক্রিয়া দেন সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে।