ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন ২০২৫: সুপ্রিম কোর্টে শুনানি অব্যাহত, স্থগিতাদেশ নয়

নয়াদিল্লি, ১৭ এপ্রিল ২০২৫:
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন ২০২৫-এর সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে দায়ের করা একাধিক মামলায় কোনও অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেনি। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ শুনানি গ্রহণ করে কেন্দ্রীয় সরকারের আইনি প্রতিনিধিদের সাত দিনের মধ্যে সংক্ষিপ্ত জবাব দাখিলের জন্য সময় দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে, পরবর্তী শুনানির তারিখ পর্যন্ত এই আইনের অধীনে কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল বা রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে কোনও নতুন নিয়োগ করা যাবে না।


ওয়াকফ (সংশোধনী) আইন ২০২৫ গত ৮ আগস্ট ২০২৪-এ লোকসভায় পেশ করা হয়। এটি ১৯২৩ সালের মুসলমান ওয়াকফ আইন বাতিল এবং ১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইন সংশোধনের লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনটির নাম পরিবর্তন করে ‘একীভূত ওয়াকফ ব্যবস্থাপনা, ক্ষমতায়ন, দক্ষতা এবং উন্নয়ন আইন, ১৯৯৫’ (UWMEED Act 1995) করা হয়েছে। এই সংশোধনীতে ওয়াকফ সম্পত্তির নিবন্ধন, হিসাব পরীক্ষা, এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিয়ম প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে ন্যূনতম দুজন মুসলিম মহিলা এবং বিভিন্ন মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বিধান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে দায়ের মামলায় আইনটির সাংবিধানিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শুনানিতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা সময় চাওয়ায় আদালত স্থগিতাদেশ না জারি করে মামলার শুনানি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রধান বিচারপতি ওয়াকফ আইন নিয়ে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায়, বিশেষ করে মুর্শিদাবাদে সহিংসতার প্রেক্ষিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, “মামলা বিচারাধীন থাকাকালীন এ ধরনের হিংসা ঠিক নয়।”
গত ১৬ এপ্রিলের এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল যে, মামলা চলাকালীন ওয়াকফ ঘোষিত সম্পত্তি (ওয়াকফ-বাই-ইউজার বা ওয়াকফ বাই ডিড) ডি-নোটিফাই করা যাবে না এবং ওয়াকফ সম্পত্তিকে সরকারি জমি হিসেবে গণ্য করার কোনও পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না।
ওয়াকফ আইন নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক ও প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। গত ১৩ এপ্রিল শিলচরে আইন বাতিলের দাবিতে একটি প্রতিবাদ মিছিল পুলিশের হস্তক্ষেপে ভেঙে দেওয়া হয়, যার ফলে সংঘর্ষ ও লাঠিচার্জের ঘটনা ঘটে। মুর্শিদাবাদে হিংসার জেরে অনেকে ঘরছাড়া হয়েছেন, এবং পরিস্থিতি এখনও উত্তপ্ত রয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টে তৃণমূল বিধায়ক হুমায়ুন কবীর, আইএসএফ বিধায়ক নওশাদ সিদ্দিকি, মহম্মদ সেলিম, মহুয়া মৈত্র-সহ একাধিক ব্যক্তি ও সংগঠন এই আইনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। আদালত পরবর্তী শুনানি মে মাসে করবে, এই মামলার গতিপ্রকৃতি এবং সম্ভাব্য রায়ের দিকে দেশজুড়ে নজর রয়েছে সাধারণ মানুষের।।

Related Posts

বিহারের রাজ্য সরকার সাংবাদিকদের পেনশন বাড়াল — ‘বিহার পত্রকার সম্মান পেনশন’ স্কিমে ₹ ৬,০০০ থেকে ₹ ১৫,০০০

বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা পাটনায় ২৬ শে জুলাই শুক্রবার, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার এক উল্লেখযোগ্য ঘোষণা করেছেন: “‘বিহার পত্রকার সম্মান পেনশন যোজনা’”র আওতায় রাজ্যের সমস্ত স্বীকৃত মৃতপ্রায় সাংবাদিক বা…

Read more

বুথ লেভেল অফিসারদের জন্য বড় সুখবর, এক লাফে বেড়েছে বার্ষিক ভাতা — বিশেষ কর্মসূচিতে মিলবে অতিরিক্ত ভাতাও

বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা1 জাতীয় নির্বাচন কমিশনের নতুন নির্দেশে বুথ লেভেল অফিসার (BLO) ও BLO সুপারভাইজারদের জন্য বার্ষিক ভাতায় বড়সড় বৃদ্ধি করা হয়েছে। মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকদের পাঠানো এক চিঠিতে…

Read more

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *