দীঘার জগন্নাথ দেবের মন্দির উদ্বোধনে মমতার সঙ্গে দিলীপ ঘোষের বৈঠক, রাজনৈতিক মহলে চর্চা

বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা

পশ্চিমবঙ্গের দীঘায় জগন্নাথ দেবের মন্দিরের ভব্য উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এক অভূতপূর্ব রাজনৈতিক মেলবন্ধনের ছবি ধরা পড়েছে। এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ ও তাঁর স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাঝে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দিলীপ ঘোষের বেশ কিছুক্ষণের বৈঠক রাজনৈতিক মহলে তীব্র চর্চার জন্ম দিয়েছে।
দীঘার জগন্নাথ ধাম, যা রাজ্য সরকারের অর্থায়নে নির্মিত, শুধু একটি ধর্মীয় স্থানই নয়, বরং এটি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও গড়ে উঠেছে। এই মন্দিরের উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিরোধী দল বিজেপির মধ্যে বাকযুদ্ধও লক্ষ্য করা গেছে। তবে, এই অনুষ্ঠানে দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি এবং মমতার সঙ্গে তাঁর আলোচনা রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।


সূত্রের খবর, দিলীপ ঘোষ এবং তাঁর স্ত্রী রিঙ্কু মজুমদার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্যমূলক আলোচনায় মেতে ওঠেন। এই বৈঠকে মন্দিরের গুরুত্ব, এর সাংস্কৃতিক তাৎপর্য এবং দীঘার পর্যটন উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। দিলীপ ঘোষ এক্স পোস্টে দাবি করেছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে বলেছেন, “দেশের অন্যান্য মন্দিরগুলো খুব ছোট হয়ে গেছে, বেশি লোক সেখানে যেতে পারেন না। এই নতুন দীঘা জগন্নাথ মন্দিরে অনেক মানুষ একসঙ্গে দর্শন করতে পারবেন।”
বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য:
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনা প্রসঙ্গে বলেন, “দিলীপ ঘোষ একজন জননেতা এবং তিনি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেই পারেন। তবে, এই মন্দির নিয়ে তৃণমূলের রাজনৈতিক খেলা আমরা মেনে নেব না। এটি একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রচার করা হলেও, এর নির্মাণে সরকারি তহবিলের ব্যবহার নিয়ে আমাদের প্রশ্ন রয়েছে।”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এই বিষয়ে তীব্র সমালোচনা করে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জগন্নাথ ধামকে মন্দির বলে প্রচার করছেন, কিন্তু সরকারি নথিতে এটি সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্র। এই দ্বৈত নীতি রাজ্যের জনগণের সঙ্গে প্রতারণা। আমি ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছি এবং প্রয়োজনে লক্ষ লক্ষ হিন্দুকে রাস্তায় নামার ডাক দেব।”
তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া:
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পাল্টা জবাবে বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী এবং বিজেপি এই মন্দির নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করছে। জগন্নাথ ধাম দীঘার গর্ব, যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিকভাবে রাজ্যের সম্পদ। দিলীপ ঘোষের উপস্থিতি প্রমাণ করে যে এই উদ্যোগের গ্রহণযোগ্যতা সর্বত্র রয়েছে। বিজেপির উচিত ধর্ম নিয়ে রাজনীতি না করে জনকল্যাণে কাজ করা।”
রাজনৈতিক তাৎপর্য:
দীঘার জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। একদিকে তৃণমূল এই মন্দিরকে তাদের উন্নয়নের প্রতীক হিসেবে তুলে ধরছে, অন্যদিকে বিজেপি এর নির্মাণে সরকারি তহবিলের ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলছে। এর মাঝে দিলীপ ঘোষের মমতার সঙ্গে বৈঠক রাজ্য রাজনীতিতে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আগামী দিনে এই ঘটনা কীভাবে রাজনৈতিক মেরুকরণে প্রভাব ফেলে, সেদিকে নজর রাখছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

Related Posts

পাণ্ডবেশ্বরে বিধায়কের মানবিক উদ্যোগ: বৃদ্ধাশ্রমে বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা শুরু

বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা পাণ্ডবেশ্বর, ১৭ জুলাই ২০২৫: “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” – এই উক্তিকে সার্থক করে তুললেন পাণ্ডবেশ্বর বিধানসভার মাননীয় বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।…

Read more

বেলদায় মর্মান্তিক দুর্ঘটনা: লরি ও প্রাইভেট কারের মুখোমুখি সংঘর্ষে আসানসোলের চারজনের মৃত্যু

বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা পশ্চিম মেদিনীপুর, ১২ জুলাই ২০২৫: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বেলদা থানার অন্তর্গত রানীসরাই এলাকায় শনিবার সকালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় আসানসোল করুনাময়ীর হাউসিং এর চারজনের প্রাণহানি…

Read more

One thought on “দীঘার জগন্নাথ দেবের মন্দির উদ্বোধনে মমতার সঙ্গে দিলীপ ঘোষের বৈঠক, রাজনৈতিক মহলে চর্চা

  1. এই অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত তৈরি করেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি অনুষ্ঠানকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। বিজেপির উদ্বোধনে অংশগ্রহণ রাজনৈতিক ঐক্যের একটি উদাহরণ। এই ধরনের অনুষ্ঠান সামাজিক সম্প্রীতির বার্তা ছড়ায়। এ ধরনের অনুষ্ঠানের প্রভাব কীভাবে জনগণের মধ্যে প্রতিফলিত হবে? WordAiApi

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *