
বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা
পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় রেলের ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর (ডিএফসি) প্রকল্প একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছে, যা দেশের লজিস্টিক খাতে আমূল পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। পূর্ব ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর (ইডিএফসি), যা পাঞ্জাবের লুধিয়ানা থেকে পশ্চিমবঙ্গের সোননগর পর্যন্ত ১,৩৩৭ কিলোমিটার বিস্তৃত, ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণভাবে চালু হয়েছে। তবে, কলকাতা বন্দর পর্যন্ত এই করিডরের সম্প্রসারণ ৫৩৮ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত করা হয়েছে, যার কারণ হিসেবে জমি অধিগ্রহণের সমস্যা এবং অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুর্বলতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (ডিএফসিসিআইএল)-এর তথ্য অনুযায়ী, পূর্ব করিডরে প্রতিদিন প্রায় ৯০টি মালবাহী ট্রেন চলছে, যা এই করিডরের ১০০ ট্রেনের ধারণক্ষমতার কাছাকাছি। এই করিডরটি কয়লা, লোহা, ইস্পাত এবং সারের মতো ভারী পণ্য পরিবহনে বিশেষ ভূমিকা পালন করছে। গত বছরের তুলনায় এই করিডরে মালবাহী ট্রেনের সংখ্যা ৬০% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভারতীয় রেলের মাল পরিবহনের প্রায় ১০% এখন ডিএফসি-র মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
তবে, পশ্চিমবঙ্গের দানকুনি পর্যন্ত করিডরের সম্প্রসারণ এখনও সম্পন্ন হয়নি। জমি অধিগ্রহণের সমস্যার কারণে এই অংশের কাজ বিলম্বিত হয়েছে, যা রাজ্যের বাণিজ্যিক ও শিল্প কার্যক্রমের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। এই করিডরটি কলকাতা বন্দরের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারত, কিন্তু বর্তমানে এই সম্ভাবনা সীমিত রয়েছে।
এদিকে, নতুন তিনটি ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে পূর্ব উপকূল করিডর (খড়গপুর থেকে বিজয়ওয়াড়া) এবং পূর্ব-পশ্চিম করিডর (খড়গপুর থেকে পালঘর) পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে যাবে। এই প্রকল্পগুলির জন্য বিশদ প্রকল্প প্রতিবেদন (ডিপিআর) ইতিমধ্যে রেল বোর্ডের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এবং বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্পগুলির জন্য অর্থায়নের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব ডিএফসি-কে ভারতীয় রেলের “মুক্তো” হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, এই করিডরগুলি লজিস্টিক খরচ কমিয়ে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন ৩৫০টিরও বেশি মালবাহী ট্রেন এই করিডরে চলছে, যা পণ্য পরিবহনের সময় অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।
তবে, বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, পশ্চিমবঙ্গে করিডরের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে জমি অধিগ্রহণ এবং নেটওয়ার্ক পরিকল্পনার সমস্যাগুলি দ্রুত সমাধান করা প্রয়োজন। এছাড়া, ফিডার রুট এবং পোর্ট সংযোগের উন্নতি করা গেলে এই করিডরগুলি রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যের জন্য আরও ফলপ্রসূ হবে।