
রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের উপর নতুন করে ভরসা রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার নবান্নে মন্ত্রিসভার পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের আইনি পরিকাঠামো শক্তিশালী করার জন্য মলয় ঘটককে বিশেষ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা মলয় ঘটকের কাঁধে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এসেছে, যা রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।।

মন্ত্রিসভায় মলয় ঘটকের উত্থান
মলয় ঘটক, যিনি বর্তমানে রাজ্যের আইন, বিচার ও বিচার বিভাগীয় তদন্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁর রাজনৈতিক যাত্রা তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল উত্তর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে তিনি একাধিকবার বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নির্বাচনী এলাকায় তিনি একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিত, যিনি সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখেন এবং তৃণমূলের সাংগঠনিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। তবে, সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে হামলার ঘটনা রাজনৈতিক মহলে বিতর্ক তৈরি করলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সিদ্ধান্ত তাঁর প্রতি দলীয় নেতৃত্বের অটুট আস্থার প্রমাণ।
মন্ত্রিসভার বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী পূর্বের নির্দেশ অনুযায়ী আইনি পরিকাঠামোর কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করেন। এই প্রক্রিয়ায় দেখা যায়, বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ এখনও সম্পন্ন হয়নি। এই বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করে মমতা মন্ত্রী মলয় ঘটককে এই কাজ তদারকির জন্য বিশেষ দায়িত্ব দেন। সূত্রের খবর, মলয় ঘটকের অভিজ্ঞতা এবং প্রশাসনিক দক্ষতার উপর ভরসা রেখেই তাঁকে এই গুরু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁর পাশাপাশি মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি তৃণমূলের লিগ্যাল সেলের দায়িত্ব থেকে মলয় ঘটককে সরিয়ে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে নিযুক্ত করা হয়েছে, যা দলের অভ্যন্তরীণ গতিশীলতার ইঙ্গিত দেয়।
বিশ্ব ব্যাঙ্ক চুক্তি নিয়ে বিতর্ক
মন্ত্রিসভার বৈঠকে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল পরিবহণ দফতরের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাঙ্কের একটি চুক্তি। সূত্র জানায়, এই চুক্তি সম্পর্কে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পূর্বে কিছু জানানো হয়নি, যা রাজ্য সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার পরিপন্থী। এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তীকে এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই ঘটনা মলয় ঘটকের নতুন দায়িত্বের গুরুত্বকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে, কারণ তাঁর নেতৃত্বে আইনি পরিকাঠামো শক্তিশালী করার কাজ রাজ্যের প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
মুর্শিদাবাদে নতুন মহকুমা:
মমতার ঘোষণায় সিলমোহর
বৈঠকে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ছিল মুর্শিদাবাদে নতুন মহকুমা গঠনের বিষয়ে। সম্প্রতি মুর্শিদাবাদ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফরাক্কাকে নতুন মহকুমা হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। এই সিদ্ধান্তে সোমবারের বৈঠকে সিলমোহর পড়েছে। ফরাক্কা, শমসেরগঞ্জ, সুতি-১ এবং সুতি-২ ব্লক নিয়ে এই নতুন মহকুমা গঠিত হবে। এই পদক্ষেপ মুর্শিদাবাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে আরও সুগঠিত করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মন্ত্রিসভার এই বৈঠকে মলয় ঘটকের নতুন দায়িত্ব এবং মুর্শিদাবাদে নতুন মহকুমা গঠনের সিদ্ধান্ত রাজ্যের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
করবে।