
বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা
আসানসোল, ৩ জুন, ২০২৫ : পশ্চিম বর্ধমান জেলার জে কে নগর থেকে সাতগ্রাম শ্রীপুর জিএম কার্যালয় পর্যন্ত জাতীয় সড়কে মঙ্গলবার দুপুরে হাজারো বিক্ষোভকারীদের নিয়ে জোরালো প্রতিবাদে সামিল হয়েছে ২২টি সামাজিক সংগঠন। প্রখর গ্রীষ্মের দাবদাহকে উপেক্ষা করে এদিন তারা কয়লা খনি কর্তৃপক্ষের আদিবাসী উচ্ছেদ এবং এলাকার জরাজীর্ণ নুনিয়া ব্রিজ ও চরণপুরের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানের দাবিতে সরব হয়।

বিক্ষোভকারীরা জাতীয় সড়ক ধরে সাতগ্রাম শ্রীপুর জিএম কার্যালয়ের গেটে পৌঁছে গেট অবরুদ্ধ করে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। বাউরী সমাজ শিক্ষা সমিতির সভাপতি সুমন্ত বাউরী, পশ্চিমবঙ্গ গোয়ালা সমাজের চেয়ারম্যান নয়ন গোপ, ভূঁইয়া সমাজ উত্থান সমিতির সভাপতি সিন্টু ভূঁইয়া এবং পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী জনকল্যাণ সমিতি সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন।
সংগঠনগুলির নেতৃত্বদের অভিযোগ, কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ কোনো বিচার-বিবেচনা ছাড়াই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষদের জোরপূর্বক উচ্ছেদ করছে, যা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এছাড়াও, হাড়ভাঙ্গা এলাকায় নুনিয়া নদীর ওপর অবস্থিত জরাজীর্ণ নুনিয়া ব্রিজটি অবিলম্বে সংস্কার বা নতুন করে নির্মাণের দাবি উঠেছে। এই ব্রিজটি কয়লা ও অন্যান্য সামগ্রী পরিবহনের কারণে বিপন্ন অবস্থায় রয়েছে, যা এলাকার বাসিন্দাদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এদিনের বিক্ষোভে রেশমি গ্রুপ অফ মাইনস কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, প্রজেক্ট এফেক্টেড পিপল (প্রকল্পের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার)দের জন্য যথাযথ পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা না করে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনন কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। নিমচা হাইওয়াল প্রজেক্ট এবং আমকোলা প্রজেক্টে অতিরিক্ত কয়লা পরিবহনের ফলে তিরাট, চেলোদ, কোয়ারডিহি সহ বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় এক লক্ষ মানুষের জীবন-জীবিকা এবং সম্পত্তি আজ বিপন্ন। খননের সময় বিস্ফোরণের প্রভাবে এলাকার বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলেও অভিযোগ।
এছাড়াও, চরণপুরের বাসিন্দাদের জীবনযাত্রার নানা সমস্যা সমাধানের দাবি উঠেছে। সামাজিক সংগঠনগুলির নেতারা জানিয়েছেন, কয়লা খনির নিয়ম-নীতি না মেনে অবৈজ্ঞানিকভাবে কয়লা উত্তোলনের ফলে এলাকার পরিবেশ এবং মানুষের জীবনযাত্রা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তারা অবিলম্বে এই সমস্যাগুলির সমাধান এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
এই বিক্ষোভে স্থানীয় বাসিন্দারা এবং সামাজিক সংগঠনগুলি একযোগে কয়লা খনি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং প্রশাসনের কাছে তাদের দাবিগুলি পূরণের জন্য জোরালো আহ্বান জানিয়েছে। এই আন্দোলন আগামী দিনে আরও তীব্র হতে পারে বলে সংগঠনগুলির নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।