
বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি, ৭ জুন ২০২৫: ভারতীয় ডাক বিভাগ (ইন্ডিয়া পোস্ট) সম্প্রতি ডিজিপিন (DIGIPIN) নামে একটি অত্যাধুনিক ডিজিটাল ঠিকানা ব্যবস্থা চালু করেছে, যা দেশের প্রতিটি ৪×৪ মিটার এলাকার জন্য একটি ১০-সংখ্যার ডিজিটাল ঠিকানা প্রদান করবে। এই উদ্যোগ ডিজিটাল ইন্ডিয়া এবং আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়াস। ডিজিপিনের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি পরিষেবাগুলি আরও নির্ভুল, দ্রুত এবং নিরাপদভাবে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হবে।

ডিজিপিন কী?
ডিজিপিন হল একটি ১০-সংখ্যার ডিজিটাল কোড, যা ভারতের প্রতিটি বাড়ি, স্থাপনা বা নির্দিষ্ট ভৌগোলিক অবস্থানকে একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা হিসেবে চিহ্নিত করবে। এটি ঐতিহ্যবাহী পিনকোড ব্যবস্থার একটি আধুনিক বিকল্প, যা আরও নির্ভুল এবং প্রযুক্তি-নির্ভর। ডিজিপিন ভারতের প্রতিটি ৪×৪ মিটার এলাকার জন্য একটি অনন্য কোড প্রদান করে, যা জিও-স্পেশাল ডেটার মাধ্যমে কাজ করে। এই ব্যবস্থা ডাক পরিষেবা, ই-কমার্স ডেলিভারি, জরুরি পরিষেবা (যেমন অ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিস), এবং সরকারি সুবিধা বিতরণে বিপ্লব ঘটাবে।
ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত
ভারত সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ডাক বিভাগ ডিজিপিনকে একটি জাতীয় ডিজিটাল ঠিকানা ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হল:
নির্ভুল ঠিকানা ব্যবস্থা: গ্রামীণ ও শহুরে এলাকায় ঠিকানার অস্পষ্টতা দূর করা।
পরিষেবার দক্ষতা বৃদ্ধি: ডাক, কুরিয়ার, এবং জরুরি পরিষেবাগুলির দ্রুত এবং নির্ভুল বিতরণ নিশ্চিত করা।
ডিজিটাল ইন্ডিয়ার সঙ্গে সংযোগ: সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে নিরাপদ ডেটা ব্যবস্থাপনা এবং যোগাযোগ স্থাপন।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন: ই-কমার্স এবং লজিস্টিক শিল্পের জন্য একটি শক্তিতিশালী ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরি করা।
ডাক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ডিজিপিন ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই চালু হয়েছে এবং এটি পর্যায়ক্রমে সারা দেশে বাস্তবায়িত হবে। সরকার এই ব্যবস্থাকে সর্বজনীন করার জন্য বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার, যেমন ই-কমার্স কোম্পানি, স্থানীয় প্রশাসন এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলির সঙ্গে সহযোগিতা করছে।
সাধারণ মানুষ কীভাবে ডিজিপিন পাবেন?
ইন্ডিয়া পোস্টের অফিসিয়াল ঘোষণা অনুযায়ী, সাধারণ মানুষ ডিজিপিন পেতে নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে পারেন:
অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ: ইন্ডিয়া পোস্টের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট (https://www.indiapost.gov.in) বা ডিজিপিন-নির্দিষ্ট পোর্টালে (যেমন https://cepmap.cept.gov.in/digipin/) প্রবেশ করতে হবে।
নিকটবর্তী ডাকঘরে যোগাযোগ: যারা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারে অসুবিধার সম্মুখীন হন, তারা নিকটবর্তী ডাকঘরে গিয়ে তাদের ঠিকানার জন্য ডিজিপিন সংগ্রহ করতে পারেন।
জিও-ট্যাগিং সুবিধা: ডিজিপিন সিস্টেম জিও-ট্যাগিং প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে, তাই সঠিক লোকেশন প্রদান করা গুরুত্বপূর্ণ।
ডিজিপিনের সুবিধা
নির্ভুলতা: ৪×৪ মিটার এলাকার জন্য নির্দিষ্ট কোড, যা ঠিকানার ভুল বোঝাবুঝি দূর করে।
দ্রুত পরিষেবা: জরুরি পরিষেবা এবং ডেলিভারির গতি বাড়ায়।
ডিজিটাল ইন্টিগ্রেশন: ই-কমার্স, ব্যাঙ্কিং, এবং সরকারি পরিষেবার সঙ্গে সহজে সংযোগ স্থাপন।
গ্রামীণ উন্নয়ন: প্রত্যন্ত এলাকায় সঠিক ঠিকানা নির্ধারণে সহায়তা।
ডিজিপিন বাংলার গ্রামীণ ও শহুরে এলাকার জন্য বিশেষভাবে উপকারী হবে, কারণ এটি স্থানীয় ডাক পরিষেবা এবং ই-কমার্স ডেলিভারির দক্ষতা বাড়াবে। পশ্চিমবঙ্গের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে, যেখানে ঠিকানা সঠিকভাবে চিহ্নিত করা প্রায়শই কঠিন, ডিজিপিন একটি যুগান্তকারী সমাধান হিসেবে কাজ করবে।
ইন্ডিয়া পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, এই ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এবং সর্বজনীন। সাধারণ মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করতে স্থানীয় ডাকঘর এবং সরকারি প্রচারমাধ্যম কাজ করছে।