
বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা
কলকাতা, ১৯ জুন, ২০২৫: বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক কাছারিবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে প্রখ্যাত শিল্পী অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ঐতিহ্যশালী বাড়ি সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলার ঘটনায় বাঙালি সংস্কৃতির উপর আঘাত হানার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে কলকাতার আইসিসিআর-এ কালচারাল এন্ড লিটারারি ফোরাম অফ বেঙ্গলের উদ্যোগে এক প্রতিবাদী আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী তথা বিজেপির রাজ্য সভাপতি ড. সুকান্ত মজুমদার, প্রাক্তন বিধায়ক বিজেপি রাজ্য নেতা ও আসানসোলের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি সহ বহু কবি, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পী ও বুদ্ধিজীবী।

গত ৮ জুন বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারিবাড়িতে একদল উন্মত্ত জনতা হামলা চালায়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোটরসাইকেল পার্কিং ফি নিয়ে দর্শনার্থী ও জাদুঘর কর্মীদের মধ্যে বচসা থেকে এই ঘটনার সূত্রপাত। হামলায় জাদুঘরের অডিটোরিয়াম, জানালা, দরজা, আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয় এবং মূল্যবান নিদর্শনের ক্ষতি হয়। এই ঘটনায় ভারতের বিদেশ মন্ত্রণালয় তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে। বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় অবশ্য এই হামলাকে ‘ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের ফল’ বলে দাবি করেছে, যদিও এই বক্তব্য ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
অন্যদিকে, পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়ি ভেঙে ফেলার ঘটনা বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি আরেকটি আঘাত হিসেবে দেখা হচ্ছে। অবনীন্দ্রনাথ, যিনি ‘ভারতমাতা’র প্রথম চিত্র অঙ্কন করে বাঙালি জাতীয়তাবাদের প্রতীক সৃষ্টি করেছিলেন, তাঁর স্মৃতিবিজড়িত এই বাড়িটি বোলপুরে অবস্থিত ছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে এই বাড়ি ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তা সাময়িকভাবে বন্ধ হয়। কিন্তু সম্প্রতি, ড. সুকান্ত মজুমদার জানান, বাড়িটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা হয়েছে, যা বাঙালি সংস্কৃতির ইতিহাস মুছে ফেলার প্রচেষ্টা বলে তিনি অভিযোগ করেন।
আইসিসিআর-এ আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় ড. সুকান্ত মজুমদার বলেন, “এই ঘটনাগুলো শুধু দুটি বাড়ির ধ্বংস নয়, এটি বাঙালি জাতিসত্ত্বার আত্মপরিচয়ের উপর আক্রমণ। রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের সৃষ্টি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূল ভিত্তি। এই অপমান কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।”
প্রাক্তন বিধায়ক তথা আসানসোল পুরনিগমের প্রাক্তন মেয়র জিতেন্দ্র তেওয়ারি এই ঘটনাকে ‘সাংস্কৃতিক অবক্ষয়ের চরম নিদর্শন’ বলে অভিহিত করে বলেন, “বাঙালির গৌরবের প্রতীক এই দুই মহান ব্যক্তিত্বের স্মৃতি রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমরা একজোট হয়ে এই ধরনের হামলার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।”
সভায় উপস্থিত সাহিত্যিক ও চিত্রশিল্পীরা এই ঘটনাকে বাঙালি সংস্কৃতির উপর পরিকল্পিত আক্রমণ বলে মনে করেন। তারা রবীন্দ্রনাথ ও অবনীন্দ্রনাথের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের দাবি জানান। সভায় একটি প্রস্তাব পাস করে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিবাদ জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে এই হামলাকে বাঙালি সংস্কৃতির প্রতি অসম্মান বলে নিন্দা করেছেন। কালচারাল এন্ড লিটারারি ফোরাম অফ বেঙ্গল জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষায় আরও কর্মসূচি গ্রহণ করবে।