শক্তি প্রদর্শন,মিছিলের পাল্টা মিছিল, সভার পাল্টা সভা- নয়ে নয়, নয়ে জয়ের ডাক জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের

বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা

আসানসোলে মিছিলের পাল্টা মিছিল। সভার পাল্টা সভা। বিজেপির “পশ্চিমবঙ্গ দিবসে”র পাল্টা তৃণমূলের “কেন্দ্রীয় বঞ্চনা”। শুক্রবারের পর রবিবারও সরগরম রইল আসানসোল।

ভ্রাতৃত্বের শহরে সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি দিয়ে গেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শুভেন্দু অধিকারীর বক্তব্যর জবাব দিলেন পশ্চিম বর্ধমানের তৃণমূল নেতৃত্ব।
শুক্রবার শুভেন্দুকে নিয়ে যে রাস্তা দিয়ে মিছিল করেছিল বিজেপি। যে মঞ্চে শুভেন্দু অধিকারী, অগ্নিমিত্রা পাল, কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য, জিতেন্দ্র তেওয়ারিরা বক্তব্য রেখেছিলেন সেই স্থানে একই মঞ্চে জেলার ৬ বিধায়ক সহ মন্ত্রী মলয় ঘটক, মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার ও জেলার নেতারা বক্তব্য রাখলেন। জবাব দেওয়া হয় শুভেন্দুর কুৎসার। প্রতিবাদ সভায় তথ্য তুলে ধরা হল কেন্দ্রীয় বঞ্চনার। ডাক দেওয়া হয় আগামী ২৬ বিধানসভা ভোটে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ৯ এ ৯। ৯ এ জয়। অর্থাৎ নয়টি বিধানসভা তৃণমূলের দখলের নেওয়ার শপথ নেওয়া হয় এদিন।

রবিবার জেলা তৃণমূলের পক্ষে আসানসোলে আশ্রম মোড় থেকে জি টি রোড ধরে গির্জা মোড় পর্যন্ত মিছিল হয়। গির্জা মোড়ে করা হয় সভাস্থল। সেখানে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী মলয় ঘটক, মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, বারাবনি বিধায়ক তথা মেয়র বিধান উপাধ্যায়, জামুরিয়া বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল চেয়ারম্যান হরেরাম সিং, রানিগঞ্জের বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়, পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি নরেন চক্রবর্তী, রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিশ্বনাথ বাউরী সহ জেলার গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। মন্ত্রী মলয় ঘটক এদিন মঞ্চ থেকে দাবি করেন বিরোধী দলনেতার মিছিল ও সভার থেকে দশগুন ভিড় হয়েছে এদিনের কর্মসূচিতে। তাও এতো কম সময়ে।
এই দিনের সভায় প্রথম বক্তব্য রাখেন মেয়র তথা বিধায়ক বিধান উপাধ্যায়। তিনি বলেন এ রাজ্যে হাত গুনে পাঁচজন বিজেপি নেতৃত্ব রয়েছেন যাদের রাজ্যের মানুষ চেনেন। তারা বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখছেন কিন্তু আগে ওই পাঁচজন নেতার একে অপরের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। একত্রিত নন তারা। তাঁরা আবার এসেছেন হিন্দুদের এক হওয়ার ডাক দিতে। আগে ওই পাঁচ জনের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ কে হবেন বাংলার মানুষকে জানান। তারপর বাংলা দখলের স্বপ্ন দেখবেন।কটাক্ষ মেয়রের।
বিধায়ক তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন ২৬ এর ভোটে একটাই লক্ষ্য। সব আসনে তৃণমূলের জয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে এই বাংলা ধ্বংস হয়ে যাবে। এই কথা বাংলার মানুষ ইতিমধ্যেই জেনে গেছে।
তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন বিজেপি ভোটে জিততে না পেরে জেলার নেতাদের ইডি সিবিআই দিয়ে চমকাচ্ছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়নি। শুভেন্দু অধিকারী এখানে এসে বলে গেছেন লোকসভা ভোটের নিরিখে আসানসোল উত্তর, আসানসোল দক্ষিণ, কুলটি, বারাবনি পাণ্ডবেশ্বর, জামুরিয়া, রানীগঞ্জ তাঁরা জিতে আছেন। আমার মনে হয় বিরোধী দলনেতা গঞ্জিকা সেবন করে এসেছিলেন। তাই ভুলভাল বকছেন। উনি জানেন না, লোকসভায় বেশির ভাগ বিধানসভয় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার মার্জিনে তৃণমূল এগিয়ে রয়েছে। দাশুর দাবি আগামী বিধানসভা ভোটে শক্তি প্রদর্শন করতে আমরা প্রস্তুত। এদিনের সভায় নরেন চক্রবর্তী সঙ্গে হাতে হাত মিলয়ে বলেন তাঁদের মধ্যে কোনও বিভেদ নেই। সবটাই ছিল বিরোধদের প্রচার।
এ দিনের সভায় মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তথ্য তুলে ধরেন। আবাস যোজনা থেকে একশো দিনের কাজ, সড়ক নির্মাণ সমস্ত কিছুতেই গত ২২, ২৩, ২৪ সালে কিভাবে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে তথ্য সহকারে সামনে আনেন তিনি। তিনি বলেন বিরোধী দলনেতা আসানসোলে এসে কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে একটা কথাও বলেননি। তিনি বলেন উত্তরপ্রদেশে গত তিন বছরে আবাস প্রকল্পে ৪৪ কোটি অর্থ অপব্যবহার হয়েছে, মহারাষ্ট্রে ১৫ কোটি টাকার অপব্যবহার হয়েছে আর তিন বছরে পশ্চিমবঙ্গে এই প্রকল্পে অর্থ অপব্যবহারে অভিযোগ করেছে কেন্দ্র পাঁচ কোটি টাকার। তারপরও বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে। অথচ ডবল ইঞ্জিনের সরকার যেখানে চলছে সেখানে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা বন্ধ করা হয়নি।
মন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন কেন্দ্রে মোদী সরকার আসার পর এই জেলা সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অথচ তাদের সংসদ ছিল এই লোকসভা কেন্দ্রে। তারপরও বন্ধ হয়ে গেছে হিন্দুস্তান কেবলস বন্ধ হয়ে গেছে বার্নস্ট্যান্ডার্ড কারখানা। ই সি এলের কয়লা খাদানগুলি প্রাইভেট সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। কেবলসে ৫ হাজার কর্মী কাজ করতেন। বার্নস্ট্যান্ডার্ডে কাজ করতেন প্রায় ৫ হাজার মানুষ। ই সি এল প্রাইভেট সংস্থা হওয়ার পর প্রায় পঞ্চাশ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। অর্থাৎ মোদি সরকার আসার পর এই জেলায় ৬০ হাজার মানুষ কর্মহীন হয়েছেন। ব্যাংকগুলো তুলে নেওয়া হয়েছে। এলাহাবাদ ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, কর্পোরেশন ব্যাংক, সিন্ডিকেট ব্যাংক এখন আর নেই । এই ব্যাংকে যারা চাকরির করতেন, পরীক্ষা দিতেন সেই জায়গা আর নেই। এদিনের মঞ্চে মন্ত্রী মলয় ঘটক দাবি করেন ২৬ এর বিধানসভা ভোটে ২৭০ টির বেশি আসন দখল করবে তৃণমূল। কারণ বিজেপির মানেই মিথ্যাচার, মানুষ বুঝে গেছেন। আর শুভেন্দু অধিকারী, পশ্চিমবঙ্গের যেখানেই যাক না কেন যতই ব্যক্তি কুৎসা করুক, কুরুচিকর মন্তব্য করুন, বদনাম করুক এই সমস্ত কিছুর জবাব মানুষ সঠিক সময় দেবেন।
পাণ্ডবেশ্বরের বিধায়ক তথা জেলা সভাপতি নরেন চক্রবর্তী বলেন ৪৮ ঘণ্টার প্রস্তুতিতে এত মানুষ এখানে জমায়েত হয়েছে। আমাদের একটাই সংকল্প নয় এ নয় অর্থাৎ নটি বিধানসভায় আমরা তৃণমূল জয় করব। শুভেন্দু অধিকারী এই জেলায় এসে জাতি নিয়ে বিভেদের রাজনীতি করার চেষ্টা করেছেন। সাম্প্রদায়িক ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেছেন মলয় ঘটক, নরেন চক্রবর্তীরা হাজার কোটি টাকার মালিক। আমার প্রশ্ন তিনি কেন ডিগবাজি খেলেন? বাংলার মানুষ সব জানেন। নরেনবাবু দাবি করেন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির ওই মিছিলের দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দাশুদা জিন্দাবাদ বলা হয়েছে অর্থাৎ আমাদের মধ্যে বিভেদ লাগানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আজকের মঞ্চে আমরা দাঁড়িয়ে সেই মিথ্যাচারের উপযুক্ত জবাব দিয়েছি।
তিনি বলেন শুভেন্দু ওই সভায় বলেছে তৃণমূল নাকি মুসলিম তোষণ করছে। মুসলিম তোষণ নয় আমরা সব ধর্মের মানুষকে সমান চোখে দেখিম সবাইকে বুকে টেনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই দিদির থেকে বড় হিন্দু আর কে হতে পারে? যিনি মা লক্ষ্মীর নামে ভান্ডার করেছেন। দিঘাতে জগন্নাথধাম বানিয়েছেন। সেই প্রসাদ বাংলার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যাচ্ছে। দুর্গাপূজার সময় এক লক্ষ টাকা করে পুজোতে উৎসাহ দিতে ভাতা দেওয়া হচ্ছে। তাই হিন্দুত্ব মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শেখাতে আসবেন না। আর হিন্দু হিন্দু করে এ রাজ্যে বিভেদ লাগানো যাবে না। ক্ষমতাতেও আসা যাবে না। শুভেন্দু অধিকারী এক সভায় বলেন আসানসোলের এই পাল্টা মিছিল ও সভা হলো? “ইয়ে ডর মুঝে আচ্ছা লাগা” কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন পালটা মিছিল করুক বা সভা করুক মানুষ এইবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন প্রত্যেকটি মানুষ বিজেপিকে ভোট দেবে কারণ তৃণমূলই সন্ত্রাস আর কেউ বরদাস্ত করতে পারছে না।
আসানসোলে তৃণমূলের কেন্দ্রীয় বঞ্চনার প্রতিবাদ মিছিল সভা প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা জিতেন্দ্র তেওয়ারি কটাক্ষ করেন। তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিও বার্তা দিয়ে বলেন ঐদিন শুভেন্দু অধিকারী এসেছিলেন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করতে। আর এই পাল্টা সভা মিছিল করে তৃণমূল বুঝিয়ে দিল তারা পশ্চিমবঙ্গ যে গঠন হয়েছিল তার বিরুদ্ধে। অর্থাৎ কারা পাকিস্তানের পক্ষে আর কারা হিন্দুস্তানের পক্ষে তা বাংলার মানুষ এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। যারা পশ্চিমবঙ্গ দিবসের বিরোধিতা করে আর পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলে উপযুক্ত সময় মানুষের জবাব দেবেন।

Related Posts

अचानक रुकी भोजन सेवा से बेहाल असहाय लोग — आसानसोल रेल डिवीजन ने बिना कारण बताए बंद कराया कार्यक्रम

बंगलार जागरण डॉट कॉम संवाददाता शहर के 13 नंबर मोड़ स्थित पुराने रेलवे फायर ब्रिगेड दफ्तर में वर्षों से एक सामाजिक संस्था द्वारा प्रतिदिन दोपहर में सैकड़ों गरीब, बेसहारा और…

Read more

এনুমারেশন ফর্ম নিয়ে জোরকদমে প্রচার—হাউজিং কমপ্লেক্স থেকে গ্রামাঞ্চলে ছুটে বেড়াচ্ছে প্রশাসন

বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা এনুমারেশন ফর্ম কীভাবে সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে—তা সাধারণ মানুষকে বোঝাতে এখন জেলা শাসক থেকে আসানসোল মহকুমা প্রশাসন সকলেই গণজাগরণে নেমেছে। শহরের বড় বড় হাউজিং কমপ্লেক্স,…

Read more

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *