
বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা
কলকাতা, ২ জুলাই ২০২৫, বুধবার: পশ্চিমবঙ্গে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নতুন রাজ্য সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য। এই ঘোষণা এসেছে এমন এক সময়ে যখন রাজ্যে বিজেপির সাংগঠনিক কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করার লক্ষ্যে দলটি নতুন নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে চলেছে। সুকান্ত মজুমদারের স্থলাভিষিক্ত হয়ে শমীক ভট্টাচার্য এই গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত হয়েছেন।

**নিয়োগ প্রক্রিয়া:**
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পর সুকান্ত মজুমদার পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন, দিলীপ ঘোষের স্থলাভিষিক্ত হয়ে। সুকান্ত মজুমদার বর্তমানে কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিজেপির ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতির কারণে নতুন সভাপতি নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। শনিবার (২৮ জুন ২০২৫) একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সভাপতি নির্বাচনের সময়সূচি ঘোষণা করে। এই প্রক্রিয়ায় মনোনয়ন জমা এবং নির্বাচন ২ ও ৩ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। বুধবার (২ জুলাই ২০২৫) দুপুর ১২:৩৫ নাগাদ দিল্লি থেকে শমীক ভট্টাচার্যের কাছে আনুষ্ঠানিক ফোন আসে, যেখানে তাঁকে মনোনয়নপত্র দাখিল করতে বলা হয়। দুপুর ২টায় তিনি সল্টলেকের বিজেপি দফতরে মনোনয়নপত্র জমা দেন। অন্য কোনো মনোনয়ন না পড়ায় শমীক ভট্টাচার্যই সুকান্ত মজুমদারের উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত হন।
**শমীক ভট্টাচার্যের পটভূমি:**
শমীক ভট্টাচার্য বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দলের মধ্যে সাংগঠনিক দক্ষতা এবং বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার জন্য পরিচিত। রাজনৈতিক মহলের মতে, তিনি সাংগঠনিক ও প্রচারমূলক দিক থেকে বেশ দক্ষ। তাঁর নেতৃত্বে বিজেপি রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আরও আক্রমণাত্মক কৌশল গ্রহণ করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাঁর নিয়োগকে দলের অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণ এবং ২০২৬ বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
**জল্পনা ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী:**
নতুন সভাপতি নির্বাচনের দৌড়ে অগ্নিমিত্রা পল এবং জ্যোতির্ময় সিং মাহাতোর নামও উঠে এসেছিল। তবে, শুভেন্দু অধিকারীর সমর্থন এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আস্থার কারণে শমীক ভট্টাচার্যই এই পদে নির্বাচিত হন। আরএসএস-এর পছন্দের তালিকায়ও তাঁর নাম ছিল, যদিও প্রাথমিকভাবে দিলীপ ঘোষের নামও বিবেচনায় ছিল। দিলীপ ঘোষ বিতর্কের কারণে এই দৌড়ে পিছিয়ে পড়েন।
**রাজনৈতিক তাৎপর্য:**
২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই নিয়োগ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। ২০২১ সালে বিজেপি ৭৭টি আসন পেলেও তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে পরাজিত হয়েছিল। শমীক ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে দলটি বুথ স্তরে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উপর জোর দিচ্ছে। শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে সমন্বয় রেখে তিনি রাজ্যে দলের প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
**দলের অভ্যন্তরীণ প্রতিক্রিয়া:**
বিজেপির অভ্যন্তরীণ সূত্র জানাচ্ছে, শমীক ভট্টাচার্যের নিয়োগ দলের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করবে। তবে, কিছু নেতা মনে করছেন, নতুন সভাপতির নির্বাচন গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে। সুকান্ত মজুমদারের সমর্থকরা তাঁকে পুনরায় সভাপতি হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন।