
বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা
মুর্শিদাবাদ/পূর্ব বর্ধমান, ৬ জুলাই ২০২৫: মহরম উপলক্ষে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ও পূর্ব বর্ধমান জেলায় সাম্প্রতিক ঘটনাগুলি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। মুর্শিদাবাদের সুতি-২ ব্লকে অস্ত্র প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা পরিষদ সদস্যের প্রতিনিধি তথা ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি ওবায়দুর রহমান ওরফে সিটু। অন্যদিকে, পূর্ব বর্ধমানে মহরমের চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় দুটি দোকানে ভাঙচুরের ঘটনা এবং ভাতার থানায় তাজিয়া নিয়ে লাঠি খেলার ঘটনায় রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

**মুর্শিদাবাদে তৃণমূল নেতার উপর হামলা**
রবিবার বিকেলে মুর্শিদাবাদের সুতি থানার জগতাই এলাকায় মহরম উপলক্ষে অস্ত্র প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করার প্রশাসনিক নির্দেশ বাস্তবায়নের সময় ওবায়দুর রহমানের উপর হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় তার মাথা ফেটে যায় এবং তাকে তড়িঘড়ি সুতির মহেসাইল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান স্থানীয় বিধায়ক ঈমানী বিশ্বাস। ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। সুতি থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।

**পূর্ব বর্ধমানে দোকানে ভাঙচুর**
পূর্ব বর্ধমান জেলার বর্ধমান শহরের নার্স কোয়ার্টার সংলগ্ন এলাকায় মহরমের চাঁদা নিয়ে বিতর্কের জেরে দুটি দোকানে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। একটি বিউটি পার্লার এবং একটি ফাস্ট ফুডের দোকানে রবিবার গভীর রাতে মুখোশধারী চার-পাঁচজন দুষ্কৃতী ভাঙচুর চালায়। দোকানের মালিকদের দাবি, কয়েকদিন আগে মহরমের জন্য মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করা হয়েছিল। তারা কম টাকা দিতে চাইলে দুষ্কৃতীরা বিল ছিঁড়ে ফেলে এবং পরে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, রবিবার রাত ১২টার পর মুখোশধারী দুষ্কৃতীরা মদ্যপ অবস্থায় দোকানে ভাঙচুর চালায়। সকালে দোকান খুলতে এসে মালিকরা হতভম্ব হয়ে পড়েন। বিউটি পার্লারের মালিক শোভনা সাঁই জানান, তার দোকানের সকল কর্মচারী মহিলা, এবং এই ঘটনায় তারা নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। ফাস্ট ফুডের দোকানের মালিক সুরজিৎ ঘটক বলেন, মাত্র এক মাস আগে দোকান খোলা হয়েছে, এবং এই ঘটনায় তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। তারা সোমবার সকালে বর্ধমান থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন বলে জানিয়েছেন।

**ভাতার থানায় তাজিয়া নিয়ে বিতর্ক**
এদিকে, পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানায় মহরমের তাজিয়া নিয়ে একটি দল রবিবার বেলা ১১টায় থানা চত্বরে প্রবেশ করে। তারা ব্যাঞ্জ বাজিয়ে এবং লাঠি খেলা প্রদর্শন করে, যা নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। পুলিশ তাজিয়ার দলকে জলের বোতল সরবরাহ করলেও, থানার ভিতরে লাঠি খেলা এবং বাজনা বাজানোর ঘটনা নিয়ে বিরোধী দল প্রশ্ন তুলেছে। বিজেপি নেতা সৌমেন কার্ফা অভিযোগ করেছেন, এই ঘটনা আইনশৃঙ্খলার অবনতির ইঙ্গিত দেয় এবং পুলিশের সামনে অস্ত্র নিয়ে খেলা পুলিশ প্রশাসনের প্রতি চ্যালেঞ্জের সমান। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের ঘটনা পশ্চিমবঙ্গকে “পশ্চিম বাংলাদেশ” বানানোর পথে নিয়ে যাচ্ছে।
জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রসেনজিৎ দাস বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই, এবং এটি সম্পূর্ণ প্রশাসনিক বিষয়। তিনি ঘটনাটিকে অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছেন। জেলা পুলিশ সুপার সায়ক দাস এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন।
**এলাকাবাসীর উদ্বেগ**
এই ঘটনাগুলি স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। সুতি ও পূর্ব বর্ধমানের ঘটনাগুলি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। পুলিশ প্রশাসন ঘটনাগুলির তদন্ত করছে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
**বাংলার জাগরণ**
এই ঘটনাগুলি নিয়ে আপনার মতামত জানাতে আমাদের ওয়েবসাইটে লিখুন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা কার্যকর, তা নিয়ে আলোচনা করুন।