
বাংলার জাগরণ ডট কম সংবাদদাতা
ফলহারিণী কালীপুজো পশ্চিমবঙ্গের একটি উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় উৎসব, যা জ্যৈষ্ঠ মাসের অমাবস্যা তিথিতে পালিত হয়। বিশেষ করে বীরভূমের তারাপীঠে এই পুজো অত্যন্ত ভক্তি ও উৎসাহের সঙ্গে উদযাপিত হয়, যেখানে মা তারা দেবীকে ফলহারিণী কালীরূপে পূজা করা হয়। এই পুজোর প্রধান আকর্ষণ হল মা কালীকে মরশুমি ফল যেমন আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল দিয়ে সাজানো এবং ভোগ নিবেদন করা। ভক্তরা বিশ্বাস করেন, এই পুজোর মাধ্যমে দেবী তাদের অশুভ কর্মফল হরণ করে শুভ ফল প্রদান করেন, যার ফলে এই তিথিকে ফলহারিণী অমাবস্যা বলা হয়।

তারাপীঠে এই দিন মন্দির ও শ্মশান এলাকা ফলের মালা ও আলোকসজ্জায় সেজে ওঠে। পুজোর প্রস্তুতি শুরু হয় আগে থেকেই, এবং রাতে বিশেষ পুজো ও আরতির আয়োজন করা হয়। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কৌশিকী অমাবস্যার পর ফলহারিণী অমাবস্যায় তারাপীঠে ভক্তদের সবচেয়ে বেশি সমাগম হয়। ভক্তরা পাঁচ বা নয়টি ফল দিয়ে পুজো করেন, এবং মায়ের মুকুট থেকে গলার মালা পর্যন্ত সবই ফল দিয়ে তৈরি হয়।
এই পুজোর ঐতিহাসিক তাৎপর্যও রয়েছে। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস এই তিথিতে মা সারদাদেবীকে ষোড়শী রূপে পূজা করেছিলেন, তাই রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে এই পুজো ‘ষোড়শী পুজো’ নামেও পরিচিত। এই দিনে ভক্তরা তাঁদের কর্মফল দেবীর চরণে সমর্পণ করেন, যা আধ্যাত্মিক ও মানসিক জাগরণের পথ প্রশস্ত করে। বিশ্বাস করা হয়, এই পুজো রোগব্যাধি দূর করে, বিদ্যা, যশ, অর্থ ও সাংসারিক শান্তি লাভে সহায়ক।
পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণেশ্বর, কালীঘাট, বেলুড় মঠ, বাগবাজার সারদা মায়ের বাড়ি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই পুজো পালিত হয়। তারাপীঠে ভক্তদের ঢল ও মায়ের ফলের সাজে সজ্জিত রূপ এই উৎসবকে আরও মহিমান্বিত করে।